- ধর্মীয় অনুভুতিকে টার্গেট করে বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীরের মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে অভিযান
স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ধর্মীয় অনুভুতিকে টার্গেট করে মসজিদে নামাজ ও খুতবা থামিয়ে আবার ওয়াজ মাহফিল থামিয়ে নিজের গুণগান প্রচার করে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। খোদ জাহাঙ্গীরের ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজে এবং ফেসবুকে জাহাঙ্গীর অনুসারীদের পোস্ট করা ভিডিও থেকে এসব তথ্য জানা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও জাহাঙ্গীরকে তার বক্তব্যে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলতে শোনা যায়নি।গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ মোঃ হাইউল খানের পোস্ট করা এই ভিডিওতে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীকে সিটির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি মসজিদে নামাজ থামিয়ে তার নিজের গুণগান প্রচার করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মোঃ হাইউল খানের পোস্ট করা এই ভিডিওতে সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের চতর নয়াপাড়ায় একটি ওয়াজ মাহফিলে তার নিজের গুণগান প্রচার করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
গত ৪ মার্চ জাহাঙ্গীরের নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এই ভিডিওতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে কুরআনের ব্যাখ্যা থামিয়ে তার নিজের গুণগান প্রচার করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
গত ৫ মার্চ জাহাঙ্গীরের নিজে ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এই ভিডিওতে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তালোটিয়া ওয়াজ মাহফিলে ওয়াজ থামিয়ে তার নিজের গুণগান প্রচার করে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
এছাড়াও জাহাঙ্গীর তার ব্যক্তিগত মতাদর্শ প্রচার করার জন্য মসজিদ আর ওয়াজ মাহফিলগুলো নিয়মিতভাবে ব্যবহার করছেন।
শিরক-বিদআত মুক্ত থাকবে মসজিদ
প্রতিটি মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিনি কাজই শুধু সেখানে অনুমোদিত। ইসলামী শরিয়তবিরোধী এবং ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ মসজিদে করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে ডেকো না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)অপরের নামাযে ব্যাঘাত না ঘটানো
হৈ-হাল্লা করা ও উচ্চস্বরে কথা বলা। (বুখারী, মিশকাত ৭৪৪নং) এমন কি কেউ নামায বা কুরআন পড়লে সেখানে সশব্দে কুরআন পাঠও করা যাবে না। একদা মহানবী (ﷺ) দেখলেন, লোকেরা নামাযে জোরে-শোরে কুরআন পাঠ করছে। তিনি বললেন, “মুসল্লী (নামাযী) তো আল্লাহর সাথে চুপিসারে কথা বলে। সুতরাং কি নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলছে তা লক্ষ্য করা দরকার। আর তোমরা এমন উচ্চস্বরে কুরআন পড়ো না, যাতে অপরের নামাযে ব্যাঘাত ঘটে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৮৫৬নং)বলাই বাহুল্য যে, মসজিদের যে প্রতিবেশী অথবা অন্য লোক যে (মাইক, টেপ, রেডিও প্রভৃতির) শব্দ বা গান-বাজনা দ্বারা অথবা কোন রঙ-তামাশা দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা-হানি করে এবং মসজিদে অবস্থিত নামাযীদের নামাযে, তেলাওয়াতে ও আল্লাহর যিক্রে ব্যাঘাত ও বাধা সৃষ্টি করে তার ভয় হওয়া উচিৎ। কারণ, মহান আল্লাহর সাধারণ উক্তি এই যে,
ومَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهُ وَسَعى فِيْ خَرَابِهَا أُولئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَّدْخُلُوْهَا إِلاَّ خَائِفِيْنَ، لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)
ইবাদতে বিঘ্ন হয় এমন সব কাজ পরিহার করা
হাদিস ও ফিকহের গ্রন্থগুলোতে মসজিদে প্রবেশের পর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু আদব বা শিষ্টাচার বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন—ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা, বিসমিল্লাহ ও দোয়া পাঠ করা, ইতিকাফের নিয়ত করা, দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ নামাজ আদায় করা, আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকা, মানুষের ইবাদত বিঘ্ন হয় এমন সব কাজ পরিহার করা, ইস্তেগফার ও দোয়া পড়তে পড়তে বের হওয়া, বাঁ পা দিয়ে বের হওয়া ইত্যাদি। (আহকামুল মাসাজিদ, পৃষ্ঠা : ৪৩১-৩৫)গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার বলেন, মসজিদ পবিত্র ও ধর্ম পালনের স্থান আর ওয়াজ মাহফিল ধর্ম প্রচারের। প্রতিটি মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিনি কাজই শুধু মসজিদে অনুমোদিত। পবিত্র স্থান কারো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা কি ব্যক্তিগত মতাদর্শ প্রচার করার জন্য মসজিদ আর ওয়াজ মাহফিলগুলো জাহাঙ্গীরকে ইজারা দিয়েছেন?
“জয় বাংলা” উপেক্ষা করছেন জাহাঙ্গীর
“জয় বাংলা” হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক স্লোগান। কোন বক্তৃতা ও বার্তা শেষে দলটির সদস্যরা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রেম দেখাতে “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও জাহাঙ্গীরকে তার বক্তব্যে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলতে শোনা যায়নি।উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলা স্লোগানকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণের জন্য হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। ২ মার্চ ২০২২ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রসঙ্গত: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনের পরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেমন জনপ্রতিনিধি পেলাম’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে জানায় “দুটি বিষয়ও গাজীপুরের নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে বলে আমরা মনে করি, যার একটি ছিল টাকার খেলা। হঠাৎ করে আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে রোজার আগে নির্বাচন এক মাসের অধিক সময়ের জন্য নির্বাচন স্থগিত হবার ফলে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে প্রার্থীরা বা তাঁদের পক্ষে বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়”। অর্থাৎ গত নির্বাচনেরও ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ধর্মীয় অনুভুতিকে টার্গেট করা হয়েছিল।
Leave a Reply